রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

আদালতের অসন্তোষ: মানহীন ৫২ পণ্য দ্রুত প্রত্যাহার করুন

রিপোর্টারের নাম / ৭৭৭ বার
আপডেট সময় :: বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০১৯, ৩:২৭ পূর্বাহ্ন

মানহীন ৫২ পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাজার থেকে ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর বিএসটিআই ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। এর মধ্যে ৫২টি পণ্য ভেজাল ও নিুমানের বলে প্রমাণ পাওয়া যায়, যার মধ্যে দেশের অনেক নামি-দামি ব্র্যান্ডের তেল, ঘি, সেমাই, নুডলস, মসলা, পানি ইত্যাদি পণ্য রয়েছে।

একজন আইনজীবীর করা রিটের জবাবে ব্র্যান্ডের খাদ্যপণ্যে ভেজালের বিষয়টি নিয়ে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ভেজাল ও নিুমানের পণ্য জব্দ, বাজার থেকে প্রত্যাহার এবং উৎপাদন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সময় বেঁধে দেন।

গত বৃহস্পতিবার ছিল আদালত কর্তৃক বেঁধে দেয়া সময়ের শেষদিন। ধার্য তারিখে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হলে আদালত তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে আদালত বলেছেন, দেশের বড় বড় কোম্পানির পণ্যের যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে?

বস্তুত দেশে প্রায় প্রতিটি খাদ্যসামগ্রী নিয়েই চলছে ভেজালের মহোৎসব। মাছ-মাংস, দুধ-ডিম ও ফলমূল থেকে শুরু করে এমন কোনো জিনিস নেই, যার মধ্যে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও ভেজাল মেশানো হচ্ছে না। মানহীন খাদ্যদ্রব্য তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মারাত্মক সব রাসায়নিক উপাদান।

সেমাই ও নুডলস তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়দা, পাম অয়েল, অ্যারারুট, সাবান তৈরির রাসায়নিক উপাদান ও এক ধরনের রাসায়নিক পাউডার। ঘি তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যধিক মাত্রায় পাম অয়েল, অতি নিম্নমানের ডালডা ও রাসায়নিক রং।

রাজধানীসহ সারা দেশে তথাকথিত মিনারেল ওয়াটারের নামে যেসব বোতলজাত পানি বিক্রি হচ্ছে, হাতেগোনা দু’একটি বাদে এর অধিকাংশই মানসম্পন্ন নয়। কিছুদিন আগে দেশের বিভিন্ন বাজার থেকে সংগ্রহ করা মরিচের গুঁড়ার ২৭টি নমুনার ২২টিতেই ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছিল সরকারের জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট।

বারডেম পরিচালিত এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল- খাদ্যে ভেজাল ও রাসায়নিকের কারণে দেশে প্রতি বছর অন্তত ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্যান্সার, ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ ডায়াবেটিস, ২ লাখ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষ ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এছাড়াও পেটের পীড়া, লিভার, অ্যালার্জিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। দেশের অধিকাংশ খাদ্যপণ্য ভেজাল ও মানহীন হলেও ক্রেতাদের কোনো সংগঠন না থাকায় অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াতে পারছে না।

ভেজালের দায়ে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হচ্ছে, তারা জরিমানা প্রদান করে পুনরায় একই কর্মে লিপ্ত হচ্ছে। ফলে ভেজালের নাগপাশ ছিন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আশার কথা যে, আদালত জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

আমরা আশা করব, মাননীয় আদালতের নির্দেশনা অনুসারে বাজার থেকে মানহীন ৫২ পণ্য দ্রুত অপসারণ করা হবে। পাশাপাশি আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ও সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে সরকার সব ধরনের খাদ্যপণ্য, পানীয় ও ওষুধে ভেজাল রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!