আমরা ডিজিটালও না স্মার্টও না, আমরা আফ্রিকার পর্যায়ে রয়েছি বলে মন্তব্য করেছেন টেলিকম বিশেষজ্ঞ ও অ্যামটবের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমরা আফগানিস্তানের কিছুটা ওপরে। কারণ ভয়েসের দিন শেষ হলেও এখনো দেশের মোবাইল অপারেটররা এখান থেকেই ৫০-৬০ শতাংশ আয় করছে। মানসম্মত সেবা দিতে হলে এখনই টেলিযোগাযোগ নীতিমালা হালনাগাদ করা দরকার।
শনিবার বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন আয়োজিত ‘বিটিআরসি’র ক্ষমতায়ন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী-২০১০ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি একথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইন্টারনেটের শুধু দাম কমালেই হবে না; মানসম্মত হতে হবে। ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে হবে। তাই এখনো যারা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাননি তাদের অন্তর্ভূক্ত করতে ইন্টারনেটের দাম কমাতে ভ্যাট-ট্যাক্স মডারেট করতে হবে। কেননা, এই দামের ৫০ শতাংশই ট্যাক্স-ভ্যাটের জন্য পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে পূর্বে রাজনৈতিক বিবেচনায় অতিরিক্ত যে লেয়ার তৈরি করা হয়েছে তা ছাঁটাই করতে হবে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় আলোচক হিসেবে ছিলেন টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিশ্লেষক ফিদা হক, মোস্তাফা মাহমুদ হুসাইন, আইআইজিএবি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাকতবর রহমান, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক, ব্যারিস্টার সানি আব্দুল হক, অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান, সিপিবি’র সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, রবি আজিয়াটা লিমিটেডের টেকনিক্যাল রেগুলেশন্স এন্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর অনামিকা ভক্ত, প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের প্রমুখ।
এদের মধ্যে টেলিকম খাতের ভোক্তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্টেকহোল্ডার বৈঠকের আহ্বান জানান আইআইজিএবি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাকতবর রহমান। অপরদিকে অনামিকা ভক্ত জানান, প্রতি বছর রবি বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করলেও মুনাফা ৩ শতাংশের বেশি হয় না। ফলে মান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সরকার এ দিকটায় দৃষ্টি দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ফিদা হক বলেন, ডাটার দাম যৌক্তিকী করণ ও ইন্টারনেট পরিকাঠামো পুণর্বিন্যাস করা জরুরী। সহজলভ্য ও দেশের সব প্রান্তে সমান গতিশীল ইন্টারনেট আমাদের লাইফ লাইন। ভয়েস ও এসএমএস এর দিন এখন শেষ। তাই ডাটার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া দরকার।
আবু নাসের বলেন, বিটিআরসি কী রাজস্ব আদায় করবে না সেবা নিশ্চিত করবে সেটা আমাদের আগে পরিস্কার করতে হবে। এই বাজারের মনোপলি ভেঙে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে। এখানে বিস্ময়করভাবে শুধু একটি প্রতিষ্ঠান আকাশ-কে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। করাপশন ও ডিক্টেটরশিপ কমাতে বিটিআরসি-কে এই জায়গায় রোল প্লে করতে হবে। ইনস্টিটিউশন শক্তিশালী হলেই বৈষম্য কমবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিলো। আমরা চাই সেই শিক্ষা নিয়ে অতিদ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করবেন। আমরা আশা করবো আইএসপি বা টেলিকমরা কখনোই সরকারের সঙ্গে থাকবেন না। ইন্টারনেট বন্ধ করবে না। বিটিআরসি-কে জবাবদিহিতার অধীনে আনতে হবে।
খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন লেয়ারে লাইসেন্স দিয়ে খাতে খাতে কর-ভ্যাট আরোপ করায় বাড়ছে ইন্টারনেটের দাম। ভোক্তা পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য, মান ও সুলভ করতে হলে লাইসেন্সের জঞ্জাল এবং ফাইবারের জঞ্জাল কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। তাই কথিত স্টেকহোল্ডার দিয়ে নয়, জনগণকে নিয়েই নীতিমালা হালনাগাদ করতে হবে।
এছাড়া সেবার মান বাড়াতে টাওয়ার নীতিমালার উন্নয়নসহ ডাটার মতো ভয়েস কলেরও ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা উচিত। ফাইবার ও টাওয়ার শেয়ারিং না করায় রিসোর্স নষ্ট হচ্ছে। ৪টি কোম্পানির ফাইবার লাইসেন্স থাকলেও দুইটি কোম্পানির কাছে এগুলো বন্দি। একইভাবে ২টি এনটিটি প্রতিষ্ঠানের কব্জায় রয়েছে সরকারের ইনফো সরকার প্রকল্প। এটি উন্মুক্ত করা না হলে তৃণমূলে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয়া যাবে না। একইসঙ্গে টেলিকম মন্ত্রণালয় নয় ডট ও বিটিআরসি-কে একীভূত করে পলিসি প্রণয়ন ও ইনফোর্সমেন্স করা হলে গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সহজ হবে।