সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর কবিরের সঞ্চালনায় এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কাজী সাইফুল হক পনির। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তাপসী খান, আল-আমিন হোসেন, খাদিজা বেগম, হুসনে আরা বেগম, মাসুদ রানা, মহানগর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মো. শাহ আলমসহ বিভিন্ন স্কুলের অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সভাপতি কাজী সাইফুল হক পনির। তিনি বলেন, আজকে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি কারিকুলাম ২০২১ ও অভিভাবকদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মিথ্যা মামলা এবং পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে পূরণকৃত দাবী দাওয়া ও প্রত্যাশা, আপনাদের মাধ্যমে তুলে ধরে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আওয়ামী সরকার যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মনুষ্যত্ব ধ্বংস কারি ” জাতীয় শিক্ষা ক্রম-২০২১” বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অত্যন্ত সুকৌশলে জাতীয় শিক্ষা ক্রম বাস্তবায়ন করতে তৎপর হয়েছিল। তখন থেকেই আমাদের সংগঠন “সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন ” ছাত্র – শিক্ষক- শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকদের মতামতের ভিত্তিতে রাজপথে নেমে মানব বন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই শিক্ষা ক্রমের ধংসাত্বক দিক গুলো তুলে ধরা হয়েছিল।
তৎকালীন সরকার রাজপথে অভিভাবকদের জোড়ালো আন্দোলনের মুখে দমন-পীড়ন নীতি অবলম্বন করে। বিগত ১৭ মাস জেল- জুলুম হুলিয়া নিয়ে যে পথ আমরা পেরিয়ে এসেছি, আমাদের দাবি দাওয়া গুলো পুরনের মাধ্যমে আজ তা এক নতুন বাঁকের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তুু আজ-ও অভিভাবকদের রাষ্ট্রদ্রোহী মিথ্যা মামলা রয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে অভিভাবকদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবী জানাচ্ছি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মধ্যে দিয়ে দেশ নতুন করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই স্বাধীনতা অর্জনে যে সকল সন্তানেরা বীরের মত রাজপথে জীবন বিসর্জন দিয়েছে আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
ইতিমধ্যে বক্তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। আমি আরও দুটি বিষয় তুলে ধরছি। যেহেতু বর্তমান যুগে ডিজিটাল ডিভাইস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক, সুতরাং শুধু ইন্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের কোডিং শেখালে হবেনা, কমপক্ষে ক্লাস এইট থেকে ছাত্র ছাত্রী দের কোডিং শেখানো উচিৎ।
বাংলাদেশের স্কুল কলেজের কিছু সংখ্যক শিক্ষকরা বিভিন্ন ভাবে শিক্ষার্থীদের উপর চাপ প্রয়োগ করে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য। এ বিষয়ে নীতি নৈতিকতা বিরোধী শিক্ষকদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে অভিভাবকদের সংযুক্ত করে মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে। মানসম্মত শিক্ষক যথেষ্ট প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষকদের মানসম্মত সন্মানি নির্ধারণ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেনো কোচিং মুখি না হয় তা নিশ্চিত করনে পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষকরা কোনো অবস্থাতেই কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারবেনা। সমাজে তাদের মর্যাদা অক্ষুণ্য রাখতে তাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি।
আজ থেকে “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার” আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচীর দাবি দাওয়া গুলো প্রাথমিক ভাবে পূরণের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘোষণা করা হইলো। পরবর্তীতে “সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন ” প্লাটফর্ম দেশের শিক্ষা ব্যাবস্হায় সেচ্ছাচারীতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দূর্ণীতি, অনিয়ম, চাপ প্রয়োগ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনলাইনে সক্রিয় থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর। তিনি বলেন, , বিগত সরকার ২০২৩ সালে গণবিরোধী শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করে। শিক্ষাক্রমটি চালু করার পর এর সঙ্গে জড়িত চক্র শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি করে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়।
জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, আমরা দেখতে পেলাম ফিনল্যান্ডের কারিকুলামের আদলে আমাদের দেশের শিক্ষাক্রম করা হলো। যেহেতু বাংলাদেশ একটি অনুন্নত রাষ্ট্র এবং এ দেশের মানুষের জীবনমান ও সংস্কৃতির সঙ্গে এমন শিক্ষাব্যবস্থা যায় না, তাই বাংলাদেশের মানুষ এ বিতর্কিত শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলো। আমরা সরকারকে এ কারিকুলাম বাতিলের আহ্বান জানালাম এবং আমাদের ৮ দফা দাবিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাক্রম চালুর প্রস্তাবনা দিলাম।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবিগুলো সংসদেও উত্থাপিত হলো। সারাদেশের মানুষ এ শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করলো। কিন্তু আমাদের দাবিকে অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দিয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আমাদের কোচিং এবং গাইড ব্যবসায়ীর ট্যাগ লাগিয়ে দেন। একপর্যায়ে আমাদের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তিন মাসেরও বেশি সময় আমাদের কারাবাস করতে হয় এবং পরে আমরা জামিনে মুক্ত হই।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে তারা ১৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। তার মধ্যে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ, ভারত থেকে নয় বাংলাদেশে বই ছাপানো, জানুয়ারিতে সব শ্রেণির বই বিতরণ, পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস বিকৃতি না করা, শিক্ষার অংশীজনদের নিয়ে কমিশন গঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ এবং শিক্ষক নিয়োগে দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা অন্যতম।