শেরপুরের নকলা উপজেলা সদর বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে একটি ওষুধের গোডাউন ও ২টি দোকান পুড়ে কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। শুক্রবার ভোর রাতে নকলা থানার দক্ষিন পাশে ঢাকা-শেরপুর মহাসড়ক সংলগ্ন চার তলা ভবনের নিচতলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
এতে একটি ওষুধের বড় গোডাউন, কাজল মেডিকেল হল নামে একটি ওষুধের বড় দোকান ও কামাল স্টোর নামে একটি স্টেশনারি দোকানের সব মালামাল ভস্মীভূত হয়ে যায়।
এ ঘটনায় ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত নূরে মদিনা মডেল মাদ্রাসার অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আটকে পরেন। পরে এলাকাবাসী বিভিন্ন কৌশলে পাশের ভবনের ছাদ দিয়ে তাদেরকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। তবে আটকে পড়া হাফেজি পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গিয়ে স্থানীয় দুইজন উদ্ধারকর্মী আহত হলে তাদেরকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে কাজল মেডিকেল হলের মালিক কামরুজ্জামান কাজল ও স্টেশনারির মালিক কামাল মিয়া তাদের দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান। এরপর রাত পৌণে ৩টার দিকে অজ্ঞাত পথচারী ও রিক্সা চালক কাজল মেডিকেল হল থেকে ধোয়া বেড় হতে দেখেন ও ভিতর থেকে আগুন লাগার ঘটনার মতো শব্দ শুনতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। পরে স্থানীয়রা দোকানের সাটার ভেঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন এবং সচেতন বেশ কয়েকজন ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় হেল্প লাইন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে আগুন লাগার বিষয়টি অবগত করেন।
স্থানীয় লোকজন ও পার্শ্ববর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার ফায়ারসার্ভিসের কর্মীদের ৪০-৫০ মিনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও ততক্ষণে সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে নালিতাবাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ছুটে আসেন। এছাড়া নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান শেরপুর ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারাও ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রনের কাজে অংশনেন।
নালিতাবাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। তিনি জানান, আমরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ছুটে এসেছি। পরে শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও আসেন। আমরা স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে ব্যবসায়ীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েগেছে।
কাজল মেডিকেল হলের স্বত্তাধিকারী কামরুজ্জামান কাজল জানান বৃহস্পতিবার বাজারের দিন হওয়ায় রাত সাড়ে বারোটার দিকে দোকান বন্ধ করে বাসায় যান। তার ওষুধের দেকান ও গোডাউনে মিলে প্রায় কোটি টাকার ওষুধ ও আসবাবপত্র ছিলো। সবকিছু ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ায় তার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। স্টেশনারির মালিক কামাল মিয়া জানান, তার আয়ের একমাত্র সম্ভল ছিলো এই দোকানটি। দোকানের সব মালামাল পুড়ে যাওয়ায় তার আজ রাস্তার বসার উপক্রম।
স্থানীয় অনেকে জানান, দীর্ঘ দেড়যুগ আগে নকলায় একটি ফায়ারসার্ভিস স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষও হয়। পরে জমির মালিকানা সংক্রান্ত মামলা ও রাজনৈতিক কারনে তা নির্মাণ কাজ থেমে যায়। এরপরে উপজেলাবাসী তৎকালীন স্থানীয় এমপি মতিয়া চৌধুরীর কাছে বেশ কয়েকবার দাবী জানালেও এর সুষ্ঠ কোন সুরাহা হয়নি। ফলশ্রুতিতে প্রায় প্রতি মাসেই উপজেলার কোন না কোন এলাকায় আগুন লাগার ঘটনায় নিরুপায় জনগণ অসহায় হচ্ছেন।
উপজেলাবাসীর দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়া নকলার ফায়ারসার্ভিস স্টেশনটি চালু করা হোক; অথবা নতুন স্টেশন স্থাপন করে উপজেলাবাসীর যানমালের অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক।