রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ নিয়ে ভয়াবহ মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে ভারতের ইনফ্লুয়েন্সাররা: বিবিসি

রিপোর্টারের নাম / ২৯ বার
আপডেট সময় :: সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন

সম্প্রতি সরকার পতনের পটভূমিতে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে যেসব ভিডিও ও তথ্য ছড়ানো হয়েছে সেগুলোর বেশিভাগই ভুয়া বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ভারতের উগ্র ডানপন্থি ইনফ্লুয়েন্সাররা এসব ভিডিও ও তথ্য ছড়িয়েছে বলেও রোববার (১৮ আগস্ট) প্রকাশিত বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়। এর ফলে সত্যিকার ঘটনা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবিসি বেশ কয়েকটি ভিডিও ও তথ্যের সত্যতা যাচাই করেছে। যেগুলোর প্রায় সবই ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার হওয়া ভিডিও চট্টগ্রামের নবগ্রহ মন্দিরের। ভাইরাল হওয়া এ ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ইসলামপন্থিরা নবগ্রহ মন্দিরে আগুন দিয়েছে। কিন্তু বিবিসি যাচাই করেছে ওই মন্দিরে নয়; আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে পাশেই অবস্থিত আওয়ামী লীগের একটি অফিসে।

মন্দিরের দায়িত্বে থাকা স্বপন দাস নামের এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেছেন, ‘৫ আগস্ট বিকেলে মন্দিরের পেছনে আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে। তারা অফিসের ফার্নিচার বের করে এগুলোতে আগুন দেয়।’

এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় দলের হিন্দু ধর্মাবলম্বী ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়িতে আগুন দেওয়ার বিষয়টিও গুজব ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। মুসলিম ক্রিকেটার ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত এমপি মাশরাফি বিন মোর্তুজার বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে ভারতে লিটন দাসের বাড়ি বলে চালানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি স্কুলে আগুন দেওয়ার বিষয়টিও তদন্ত করেছে বিবিসি। এতে দেখা গেছে স্কুলে আগুন দেওয়ার বিষয়টির সঙ্গে ধর্মীয় কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি পুরোটিই রাজনৈতিক।

এসব ভিডিও বেশিরভাগই একাধিক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা হয়েছে। যার মধ্যে অনেক অ্যাকাউন্ট হিন্দু-জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বিশ্বব্যাপীও ছড়িয়েছে এসব ভুল তথ্য

উগ্রডানপন্থি ব্রিটিশ নাগরিক টমি রবিনসন হিন্দু নারীর সাহায্য চাওয়ার একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। তিনি নিজের দেশ যুক্তরাজ্যেও গত কয়েকদিন আগে হওয়া দাঙ্গা নিয়ে মুসলিম বিদ্বেষী ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছিলেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে এই উগ্রপন্থি লিখেছেন, ‘হিন্দুদের জন্য আওয়াজ তুলুন। যখন ইসলাম মূল হয় তখন অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্য এটি বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়। আমার দেশে এসব বন্ধ করতে চাওয়ায় আমি ক্ষমা চাইব না। তারা আমাকে যা ইচ্ছা তাই বলুক।’

তবে বিবিসি যাচাই-বাছাই করে দেখেছে ওই নারীর বাড়ি এবং সেখানে থাকা একটি মন্দির পুরোপুরি অক্ষত রয়েছে। আর যে ভিডিওটি তৈরি করে ছড়ানো হয়েছে সেটি মূলত জমিজমা সংক্রান্ত একটি ঝামেলার।

স্থানীয় কিছু শিক্ষার্থী বিবিসিকে ওই নারীর বাড়ি ও মন্দির অক্ষত থাকার প্রমাণও দেখিয়েছে।

বার্তাসংস্থা এএফপির বাংলাদেশি ফ্যাক্টচেকার কাদেরউদ্দিন শিশির বিবিসিকে বলেছেন, ‘হিন্দু মালিকানাধীন সম্পত্তিতে হামলা হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় ডানপন্থি অ্যাকাউন্টে রাজনৈতিক এসব হামলাকে ধর্মীয় হামলা হিসেবে ছড়ানো হচ্ছে।’

অলাভজনক সংগঠন হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান পরিষদ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সহিংসতায় পাঁচজন হিন্দুর মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে দু’জন সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

এদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে কেউ যেন মন্দির এবং হিন্দুদের সম্পত্তিতে হামলা না চালাতে পারে সেজন্য যে মুসলিমরা পাহাড়া দিয়েছে সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির এই প্রতিবেদনে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!