ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ও শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলায় বেআইনিভাবে অনেক কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ চাকরিচ্যুত শ্রমিক ও কর্মচারীদের। একই সঙ্গে পুনরায় চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার ৩০ আগস্ট ২০২৪ খ্রিঃ সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল ঢাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ দাবি জানান। চাকরিচ্যুত কর্মচারীরা অভিযোগ করে বলেছেন, এই হোটেলে নিজস্ব ‘আয়নাঘর রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই সেখানে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
লিখিত বক্তব্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ক্যাটারিং সেলস এক্সিকিউটিভ এবং শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান বলেন, গত সরকারের ভারতপ্রীতির কারণে কিছু রাজনৈতিক নেতা, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের (বিএসএল) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং হোটেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যবস্থাপক পদে ভারতীয় নাগরিককে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শ্রমিকরা হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার।
তিনি বলেন, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলেও রয়েছে নিজস্ব আয়নাঘর। সেখানে নেওয়া হলে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে কর্মচারীদের সেখানে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। বিনা নোটিশে ৩৬ জনেরও বেশি কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। নুরুজ্জামানের দাবি, গত ২৮ আগস্ট ভোরে ডিবি তাকে তুলে নিয়ে যায় এবং রমনা থানার ওসি চাপ দিতে থাকেন আন্দোলন থেকে যেন তিনি সরে যান। পরে ছাত্রসমাজ এবং সহকর্মীদের চাপে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
নুরুজ্জামান বলেন, এই হোটেলকে কোনো অপশক্তি যেন দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে না পারে, অপশাসন, অব্যবস্থাপনা না থাকে এবং হোটেলকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার্থে কিছু শ্রমিক-কর্মচারী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাদের রোষানলে পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে উক্ত শ্রমিক কর্মচারীদের ঐ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বিআইসিসি প্যাড ইস্যু করে চাকরিচ্যুত করে। ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে এমডি, জিএম, এইচ আর ডিরেক্টরসহ আরও কর্মকর্তার দুর্নীতি, অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিস্তর প্রমাণ আছে। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক-কর্মচারীরা এই ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে।
এই কর্মকর্তা বলেন, হোটেলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের অপসারণে কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত কর্মচারীদের অতিসত্বর চাকরিতে পুনর্বহাল করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, যে ফ্যাসিবাদের কারণে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে ঠিক একই ফ্যাসিবাদ এই পাঁচ তারকা হোটেলে বিদ্যমান, কারণ বেশির ভাগ কর্মকর্তা ফ্যাসিবাদের দোসর।
তিনি দাবি করেন, গত ২৮ আগস্ট ভোর ৪টায় ডিবি তাকে তুলে নিয়ে যায় এবং রমনা থানার ওসি চাপ দিতে থাকে এই আন্দোলন থেকে যেন আমি সরে যাই। যা আগের ফ্যাসিবাদি পুলিশ করতো। কিন্তু স্বৈরাচার পতনের পরও এই ফ্যাসিবাদ পুলিশ সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া আমাকে উঠিয়ে নিয়ে গুম করে রাখে এবং পরিবারকে কোনো তথ্য দেয় না। পরবর্তীতে সকাল ৮টা হতে ছাত্র সমাজ এবং সহকর্মীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, তাকে ডিবি উঠিয়ে নিয়ে যায়। যা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। শুধু তাই নয় রমনা থানার ওসি ছাত্র-সমাজ ও সহকর্মীদের সঙ্গে দৃর্ব্যবহার, ঔধ্যত্যপূর্ণ আচরণ এবং অশালীন ভাষায় কথা বলেন। এমনকি আমার স্ত্রীর সাথেও অশালীন -অসদচারণ করেন এবং মুচলেকা দিয়ে নিতে বলে যেন আমি আর কোনো আন্দোলন না করি। যা সেই পুরানো ফ্যাসিবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতা ও সহকর্মীদের ন্যায়সঙ্গত চাপ প্রয়োগে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
মো. নুরুজ্জামান বলেন, এখন প্রশ্ন জাগে এটা কোন দেশ? যে দেশ আমরা স্বৈরাচার মুক্ত করেছি? কি ব্যবহার পাচ্ছি সরকারি অফিস থেকে?
নুরুজ্জামানের ভাষ্য, বিগত ১৪ বছর চাকরি করার পর আমিসহ ৩৬ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়৷ আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের বিচার চাই৷ আমরা ম্যানেজমেন্টকে অনুরোধ করি আমাদের শ্রমিকদের অধিকার যেন প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ আমরা এর আগেই আমাদের দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করি৷ আমরা চাই আমাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হোক৷