বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২৪ পালিত হয়েছে ।
বিশ্বের সকল দেশের জন্য ইউনেস্কো নির্ধারিত এবারের আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘বহু ভাষায় শিক্ষার প্রসার: পারস্পরিক সমঝোতা ও শান্তির জন্য সাক্ষরতা। ’(Promoting Multilingual Education: Literacy for Mutual Understanding and Peace),
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং সচিব ফরিদ আহাম্মদ বাণী দিয়েছেন।
এ উপলক্ষ্যে রবিবার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ ঢাকায় তেজগাঁওস্থ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মিলনায়তনে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০২৪’ উদযাপন উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০২৪’ এর উদ্বোধন করেন।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের মহাপরিচালক নুরজাহান খাতুন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুস সামাদ, বাংলাদেশস্থ ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুসান ভাইজ (SUSAN VIZE) প্রমুখ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, শিক্ষা মানুষের অধিকার। ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সাক্ষরতা বিস্তারে এ সাফল্যের জন্য আমরা ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পেয়েছি। সাক্ষরতার ক্ষেত্রে অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। আমরা অবৈতনিক শিক্ষা ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। শুধু অবৈতনিক শিক্ষা নয়; আমরা উপবৃত্তি দিচ্ছি, বইপত্র দিচ্ছি, স্কুলে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা কোন কোন স্কুলে হচ্ছে; সেটিকে আরো বিস্তৃত করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ভাষা ছাড়া অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, শিশুরা মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারলে তাদের ডেভেলপ হতে সমস্যা হয়। আমরা শুধু দেশের নাগরিক না, আমরা এখন আন্তর্জাতিক নাগরিক। যোগাযোগ, যাতায়াত, অর্থনীতি, সবদিক দিয়ে বিশ^টাই একটি একীভূত বিষয় হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক নাগরিক হয়ে উঠার জন্য আমাদের অন্য ভাষা চর্চা করা প্রয়োজন। আমাদের বাচ্চাদেরকে যদি বহু ভাষাভাষী করে গড়ে তুলতে পারি তাহলে তারা দেশের জন্য সম্পদ হয়ে দাঁড়াবে। যদি নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি তাহলে দেশ ঠিক হয়ে যাবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, দক্ষতাভিত্তিক সাক্ষরতা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি একটি ভালো প্রকল্প। এটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। যদি এতে আশানুরুপ ফলাফল হয়, তবে চেষ্টা থাকবে সেটিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা শুধু মানুষকে স্বাক্ষর করে তুলতে চাই না, তাদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই; যেন সে কর্মজীবনে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে। সাক্ষরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাক্ষরতার মাধ্যমে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব চেঞ্জ হয়ে যায়। একজনকে সক্ষম করে তোলা মানে তার জ্ঞানের মাত্রাটা অবারিত হয়, অভিজ্ঞতাটা অবারিত হয়, প্রকাশটা অবারিত হয়। স্বাক্ষর মানুষ একটি জাতির জন্য সম্পদ। বিপুল জনসংখ্যার বাংলাদেশের জনসংখ্যা সম্পদ হতে পারে যদি তাদেরকে স্বাক্ষর করে তুলতে পারি, দক্ষ করে তুলতে পারি। মানুষ মানুষ হয়ে ওঠে তার ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে। সভ্যতার অন্যতম আবিষ্কার ‘লিপি’ আবিষ্কার। ‘লিপি’ আবিষ্কার সভ্যতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং এ বিষয়টি মানুষকে আরেকটি স্তরে নিয়ে গেছে।