১৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। এই দিবস উপলক্ষে শেরপুরের নকলায় সাংবাদিকদের করণীয় বিষয়ক পরামর্শমূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঐতিহ্যবাহী নকলা প্রেস ক্লাবের অফিস কক্ষে ক্লাবটির সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন-এঁর সভাপতিত্বে ব্যাতক্রমী এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নূর হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় পুরুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনমানের উপর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন, প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার জসিম উদ্দিন মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সরকার বাবু, ক্রীড়া সম্পাদক মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলে রাব্বী রাজন প্রমুখ। বক্তারা পুরুষের প্রতি বিভিন্ন বৈষম্যপূর্ণ আইনের মাধ্যমে নানাবিধ হয়রানি ও পুরুষ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।
‘বাংলাদেশ মেনস রাইটস ফাউন্ডেশন’ নামে বেসরকারি একটি সংস্থার গবেষণার তথ্য সূত্রের বরাতে বক্তারা জানান, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ বিভিন্ন ভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার। তবে সামাজিক লজ্জার ভয়ে অনেকেই নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ করতে চান না বা কৌশলে এড়িয়ে যান। পুরুষ নির্যাতনের বিষয়ে একমত মানবাধিকার কর্মীরাও। মানবাধিকার কর্মীদের অনেকে জানান, কয়েক বছর ধরে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই পুরুষ নির্যাতিত হওয়ার খবর তাদের কাছে আসে। তবে কারো দ্বারা যেকেউ যেকোন ধরনের নির্যাতনের স্বীকার হলে তার যথাযথ আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে বলে তারা দাবী করেন।
তারা বলেন, প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন এলাকায় পুরুষ নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন। লোক লজ্জার ভয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছেন অনেক পুরুষ। পুরুষ নির্যাতন রোধে সুনিদৃষ্ট আইন না থাকায় এবং লজ্জার কারনে তারা নির্যাতনের কথা বলতে পারছেন না। অদৃশ্য নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকে মানবাধিকার সংগঠনের কাছে গেলেও, পুরুষ নির্যাতন রোধে প্রচলিত আইন না থাকায় কেউই নির্যাতিত পুরুষের পাশে দাঁড়াতে রাজি হননা। ফলে সবার অজান্তে নিয়মিত মানবাধিকার লঙ্গন হচ্ছে। কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে সুনিদৃষ্ট আইন থাকায় কোনো নারী নির্যাতিত হলে, সে সরাসরি বিচার চাইতে পারেন। ফলে নারী ও শিশু নির্যাতন কম হয়। তাই পুরুষ নির্যাতন রোধে সুনিদৃষ্ট আইন প্রণয়নের দাবি জানান তারা। পুরুষ নির্যাতনবিরোধী আইন করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও এই আইনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানোর পক্ষে মত প্রকাশ করেন তারা।
বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে, কিন্তুপুরুষরা দেশের এমন একটি জাতিগোষ্ঠী যারা সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার। তাদের সাথে বিভিন্ন আইনি এবং সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে জানান, প্রেম গঠিত কারণে ছেলে-মেয়ে উভয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলে শুধুমাত্র ছেলে ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলায় হয়রানি বা শাস্তি প্রদানের রেওয়াজ চলমান। কিন্তু ছেলে ও মেয়ে স্বেচ্ছায় পালিয়ে গেলে দুইজনই সমান অপরাধী হওয়ার কথা এমনকি ঘটনাকে কোন ক্রমেই অপহরণ হিসেবে গণ্য করা কাম্য নয়। বিভিন্ন কারনে প্রাপ্ত বয়স্ক কোন নর-নারীর উভয়ের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্কের মতো ঘটনা ঘটলে এবং কোন কারনে উভয়ের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হলেই পুরুষ লোকটিকে ধর্ষক’ হিসেবে অপরাধী বলে গণ্য করা হয়। তবে এই ক্ষেত্রে যদি শাস্তি হয়, তাহলে নর-নারীর উভয়েরই হওয়ার কথা। এছাড়া মিথ্যা ধর্ষণ মামলা প্রমাণিত হলেও মামলাকারীর বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তি প্রদানের নজির কম।
যৌতুকসহ যেকোন মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সমন বা গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুর পূর্বে তদন্ত প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক নাথাকায় পুরুষরা জেল জরিমানাসহ হয়রানির স্বীকার হন। পরে মামলাটি মিথ্যা প্রমানিত হলেও জেল জরিমানা ও হয়রানির বদলা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। অনেক অর্থলোভী নারীদের বহুবিবাহ প্রতারণা রোধে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ডিজিটালাইজ না হওয়ায় হরহামেশাই পুরুষরা দেনমোহর আদায়ের গ্যাড়াকলে পড়ার খবর পাওয়া যায়। কাবিন বানিজ্য রোধে সাধ্যের অতিরিক্ত কাবিন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া এখন যেন অপসংস্কৃতিতে পরিণত হচ্ছে। এছাড়া নারী-পুরুষ উভয়য়েই পরকীয়ায় আসক্ত হওয়ায় ব্যভিচারের ঘটনা ঘটে; অথচ ব্যভিচারের ৪৯৭ ধারা মোতাবেক সাধারণত পুরুষকেই অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই ব্যভিচারের ৪৯৭ ধারাটি সংশোধন করে নারী-পুরুষের সমান শাস্তির দাবি করেন। সর্বোপরি পুরুষের মানবাধিকার রক্ষা ও পুরুষ নির্যাতন রোধে আইন প্রণয়নের দাবী উত্থাপনের পাশাপাশি পুরুষ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করারও দাবী জানান বক্তারা। আর বৈষম্যের এই বিষয় গুলো সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম কর্মীরা গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারেন বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।