শঙ্কার মধ্যেই অবশেষে কয়লা সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেলো কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ির বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু’টি ইউনিটেরই উৎপাদন। পুরোপুরি আমদানিনির্ভর এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র কবে আবার উৎপাদনে আসতে পারবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
অনিয়ম-দুর্নীতি ও মামলার বেড়াজালে পড়ে বেহাল দশা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা ঋণনির্ভর এই মেগা প্রকল্পটির। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি নভেম্বরের শেষ দিকে বিদেশ থেকে কয়লা এলে নিরসন হবে অচলাবস্থার।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে গড়ে তোলা আওয়ামী লীগ সরকারের ঋণনির্ভর মেগাপ্রকল্প মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ মেগাপ্রকল্প ঘিরে বেরিয়ে এসেছে অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ানোয় আগস্টের মাঝামাঝি থেকে বন্ধ কয়লা আমদানি। ফলে অল্প কয়লার মজুত নিয়ে কার্যত বেশ কিছুদিন আগে থেকেই বন্ধের শঙ্কায় ছিল এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। অবশেষে অনিশ্চয়তা নিয়েই বন্ধ হয়ে গেলো এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু’টি ইউনিটেরই উৎপাদন। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ খাতে।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘কয়লাও শেষ আর এর সাথে কিছু মেইনটেনেন্সের কাজও আছে এগুলোর কারণে বন্ধ আছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে চালু হবে ইনশাআল্লাহ।’
মাতারবাড়ী প্রকল্পের একটি ইউনিট ২০২৩ সালের জুলাই ও অপর ইউনিট ডিসেম্বরে চালু হয়। যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে আনা হয় ২২ লাখ পাঁচ হাজার টন কয়লা। চুক্তি অনুযায়ী সুমিতমো করপোরেশন কয়লার সবশেষ সরবরাহ দেয় গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন বছরের কয়লা সরবরাহে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। তবে সাবেক প্রকল্প পরিচালক একটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় ১০ মাস দেরি করে বলে অভিযোগ উঠে। ওই অনিয়মের অভিযোগ তুলে আদালতে অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জুলাইয়ে কয়লা আমদানিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। সেই আদেশ উচ্চ আদালতে স্থগিত হলেও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে কয়লা আমদানি।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আদনান ইব্রাহিম বলেন, ‘একটা মেশিন চললে তো কিছু মেইনটেন্যান্স লাগে আর এর সাথে কয়লাও একটা কারণ বন্ধ হওয়ার জন্য। আর শীতকালে তো পাওয়ার ডিমান্ড কিছুটা কম থাকে।’
গত ৩০ আগস্ট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অন্যত্র সরানোর সময় কয়েকটি কনটেইনার ভর্তি ১৫ কোটি টাকার বৈদ্যুতিক তার জব্দ করে নৌবাহিনী। এ ঘটনায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ও এমডি আবুল কালাম আজাদ এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পরে ওই মামলায় গ্রেপ্তার হন প্রকল্প পরিচালক।