বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ঢাকা ওয়াসার উচ্চতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ লক্ষ্যে মডস জোন-৭ অর্থাৎ জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, দনিয়া, শ্যামপুর, কাজলা ও মাতাল এলাকার গ্রাহকদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার শনির আখড়া দনিয়া কলেজের স্বাধীনতা অডিটোরিয়ামে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য মোঃ মকবুল-ই-ইলাহি চৌধুরী। তিনি বলেন, আমি এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে সদস্য হিসেবে অনেক গণশুনানি অনুষ্ঠিত করেছি। কিন্তু নাগরিক সমাজ ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে যেভাবে জনগণের দ্বারপ্রান্তে এনে দিয়েছে তা নজিরবিহীন। এর মাধ্যমে জনগণ সরাসরি কর্তৃপক্ষের সাথে তার সমস্যা, অভিযোগ এবং সমাধানের পথ খুঁজবে।
তিনি সরকারের অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলিকে এভাবে জনগণের মুখোমুখি হতে আহবান জানান।
ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার রায় গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যে কোন অভিযোগ- হোক সেটা দুর্নীতি বা সমস্যা বা সমাধানের জন্য আমাদের জানান।
তিনি একটি whatsapp নাম্বার গ্রাহকদের প্রদান করেন। সেটি হল, ০১৫৫০-০৭৮৬১১। তিনি এই নাম্বারে অভিযোগের ধরন লিখে কিংবা ছবি তুলে পাঠাতে বলেন। তবে সরাসরি এই নাম্বারে ফোন না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে গ্রাহকদের সাথে অসদাচরণ এবং অনিয়মের কারণে ১২ জনের চাকরি চলে গেছে। আপনাদের প্রধান কার্যালয় থেকে সবাইকে অভিযোগ জানানোর জন্য মেসেজ দিয়ে জানানো হয়। আপনারা দয়া করে মেসেজগুলো পড়ে দেখবেন।
পানির মূল্য বৃদ্ধির প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ছে । তাছাড়া যে নদীগুলি থেকে আমরা পানি সরবরাহ করি সে নদীগুলির পানি দূষণের মাত্রা অতিক্রম করেছে। ফলে আমাদের শোধনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা কে নিশ্চয়ই আপনারা চাইবেন না ওয়াসা বেসরকারি খাতে দিয়ে দেয়া হোক। আপনাদের সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে ইনশাল্লাহ।
দনিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো: আলমগীর মিয়া বলেন, ওয়াসার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিন দিন কমে আসছে। তারা আজকে যেভাবে জনগণের সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে তাতে করে ওয়াশা যে জনবান্ধবভাবে কাজ করতে চায় তা তারা প্রমাণ করেছে। এখন দ্রুত ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি দূর করার সমাধান বের করা উচিত।
শ্যামপুর কদমতলী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনোয়ার বলেন, আমরা নতুন সারফেস সঞ্চালন দিয়ে লাইন এর জন্য রাস্তা কাটছি, আমাদের দায়িত্ব এ পর্যন্ত। রাস্তা মেরামত করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের।
এ সময় মঞ্চে উপবিষ্ট দুই সিটি কাউন্সিলরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৫৮, ৫৯ ও ৬০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোসাম্মৎ সাহিদা বেগম বলেন, আমাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানির জন্য আমাদেরকে গালিগালাজ করে। যদিও ওয়াসা আগের চাইতে এখন অনেক ভালো কাজ করছে তারপরও যে সমস্যা বিদ্যমান আছে তার দ্রুত সমাধান করার আহ্বান জানান।
৬৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ শফিকুল ইসলাম খান দিলু বলেন, চার বছর আগে আমার এলাকায় পানি হাত দিয়ে ধরা যেত না। আবার পানি পাওয়া যেত না। কিন্তু বর্তমান প্রকৌশলী মোঃ লিমন মিয়া কে বলার সাথেসাথেই তিনি এলাকায় একটি গভীর নলকূপ বসিয়েছেন এবং সঞ্চালন লাইন দ্রুত মেরামত করে দিয়েছেন। এজন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ ইমাম হোসেন নামে একজন গ্রাহক ময়লাযুক্ত পানি নিয়ে উপস্থিত হয়ে তা প্রদর্শন করেন। খাইরুল নামে এক গ্রাহক বলেন, মিটারে রিডিং কম উঠলেও বিল করে বেশি। এর উত্তরে উত্তম কুমার বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন। ঐ ব্যক্তির চাকরি থাকবে না।
কাজলা থেকে রাজু নামে এক গ্রাহক বলেন, গ্যাস বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধির সময় আগে গণশুনানি করা হতো এখন সেটা আর হয় না। যাহোক অন্ততপক্ষে ওয়াসার পানির মূল্য আজকে বৃদ্ধি করার সময় কর্তৃপক্ষকে পেয়েছি। তিনি আহ্বান জানান মূল্যবৃদ্ধির আগে যাতে করে এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে মতামত নেয়া হয়।
বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের মত পানির ক্ষেত্রে করা হবে কিনা জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ বলেন, বিদ্যুৎ আর পানি এক না। এতে করে গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়বে এই কথা চিন্তা করে আমরা এই কার্যক্রমে যাচ্ছি না।
দনিয়া কলেজের কোষাধ্যক্ষ রহমান সাহেব বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়া সত্ত্বেও উচ্চমূল্যে বোতলজাত পানি কেন কিনে খাচ্ছি?
থানার পর থেকে আসা একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে মানুষ আমাদেরকে নানা ধরনের গালিগালাজ করে এ থেকে মুক্তি চাই।
জুরাইন এলাকার নকীব উদ্দিন বলেন, জুরাইনে এখন পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় কিন্তু যে পানি পাওয়া যায় এটি ফুটিয়ে খাওয়ার জন্য গ্যাস পাওয়া যায় না।
এরকম আরো প্রায় ২০-২৫ জন গ্রাহক বক্তব্য রাখেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজস্ব কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ বাবু বলেন, এ এলাকায় ৫২ হাজার গ্রাহক আছে। সবাই যদি সহযোগিতা না করে তাহলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না।
নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ লিমন মিয়া বলেন, নতুন যে সঞ্চালন লাইন এতে দয়া করে আপনারা কেউ কড়াকড়ি করতে চেষ্টা করবেন না আর নতুন করে লাইনও নেবেন না। খুব দ্রুত সুপেয় পানির লাইন দেয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
যদি কারও কোন ধরনের অভিযোগ থাকে তিনি তার ব্যক্তিগত নাম্বার দিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম, সম্মিলিত জলাধর রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক ইবনুল সাঈদ রানা, পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লি. এর কামরুননাহার (পুতুল) প্রমুখ।