বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৮:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ঝিনাইগাতীতে ভূমি অফিসের মিথ্যা প্রতিবেদনে জমি হারানোর আশঙ্কায় এক পরিবার ডুমুরিয়ায় গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত নাসিরনগরে হত্যা মামলার তিন আসামী গ্রেপ্তার নেছারাবাদে পেশাজীবী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে অবহিতকরণ সেমিনার বহিষ্কারের পর সংগঠনের দুই নেতাকে সমন্বয়ক লিজার আলটিমেটাম আশ্রয়ণ প্রকল্প নয় যেন অপরাধের স্বর্গরাজ্য ভার্চুয়াল জগতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ ভার্চুয়াল জগতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বরিশাল – ৫ আসনের সাবেক এমপি ডিবির হাতে গ্রেফতার মাগুরার চাঞ্চল্যকর শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামী হিটু শেখের ফাঁসির রায়

রামুর আনসার ভিডিপি কর্মকর্তার লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ

এস এম হুমায়ুন কবির, কক্সবাজার / ৭৯ বার
আপডেট সময় :: সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪, ৩:১৮ অপরাহ্ন

কক্সবাজারের রামুতে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারি আনসার ভিডিপি সদস্যদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমান উল্লাহ। কেবল অর্থ আত্মসাৎ নয়, আরও নানান অনিয়মে ভরপুর ছিলো এবারের নির্বাচনে আনসার বাহিনীর দায়িত্ব পালন।

অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে একই নাম একাধিক কেন্দ্রের তালিকায় দেয়া হয়েছে। টাকা না দেয়ায় দায়িত্ব পায়নি শত শত আনসার ভিডিপি সদস্য। উৎকোচের বিনিময়ে রামুর নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছে একাধিক ভিন্ন উপজেলার নারী—পুরুষ। বিভিন্ন কেন্দ্রে তালিকার চেয়ে কম সদস্য দায়িত্ব পালন করেছে। এছাড়া নির্বাচনে প্রশিক্ষণবিহীন, অসুস্থ ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দায়িত্ব পালনে দেখা গেছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে আনসার ভিডিপির এমন হযবরল অবস্থা নিয়ে সর্বত্র চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। খোদ আনসার ভিডিপি সদস্যরা এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের বাসিন্দা দলনেতা শাহজাহান ৫টি গ্রুপ দিয়েছে। এর মধ্যে ১৩ সদস্যের প্রতিটি গ্রুপের জন্য আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আমান উল্লাহকে ৬ হাজার করে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। আবার উক্ত শাহজাহান প্রতিজন সদস্যের কাছ থেকে এক থেকে দেড় হাজার টাকা করে নিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, এ ৫টি গ্রুপে যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছে তাদের অধিকাংশ আনসার ভিডিপি সদস্য নয়।

রাজারকুল ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার আলম শাইর জানিয়েছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার ভাই আনসার ভিডিপি সদস্য মোহাম্মদ আলম একটি গ্রুপ দিয়েছেন। এজন্য আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আমান উল্লাহ তার ভাইয়ের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। পরে অপর একটি গ্রুপ ১০ হাজার টাকা দেয়ায় তার ভাইয়ের গ্রুপ বাদ দেয়া হয়। পরে তিনি (আলম শাইর) মেম্বার পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করলে তার ভাইয়ের গ্রুপটি নেন। তবে এজন্য ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়েছেন ৬ হাজার টাকা। অন্যান্য গ্রুপ থেকে ওই কর্মকর্তা ১০/১৫ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, এ আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা অসহায় আনসারদের যেভাবে শোষণ করছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

জিহাদুল ইসলাম (পিতাঃ মোস্তাক আহমদ) নামের এক আনসার সদস্যের নাম রয়েছে ৩টি কেন্দ্রের তালিকায়। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, দক্ষিণ চাকমারকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ক্রমিক নং ৩), চেইন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ক্রমিক নং ৯) ও রামকোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮)। তবে মোবাইল নাম্বার দেয়া হচ্ছে ভিন্ন।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আমান উল্লাহ অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এভাবে একটি নাম তিনটি কেন্দ্রের তালিকা দিয়েছেন।

এমনই অভিযোগ, সাদ্দাম হোসেন পিতাঃ জাকের হোসেন নামের এক ব্যক্তির নাম ২টি কেন্দ্রের তালিকায় রাখা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, মনিরঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ক্রমিক নং ৩) ও চেইন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র (ক্রমিক নং ৫)।

ক্ষুব্দ আনসার ভিডিপি সদস্যরা জানিয়েছেন, টাকা দিতে না পারায় এবার নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাননি উপজেলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শত শত আনসার ভিডিপি সদস্য। অথচ উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আমান উল্লাহকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর ও ঈদগাঁও উপজেলার শতাধিক নারী—পুরুষ। যাদের মধ্যে অনেকের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সনদপত্র ছিলো না।

গর্জনিয়া ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্লাটুন কমান্ডার নাম প্রকাশ না করার শর্তে (অডিও বক্তব্য রয়েছে) জানিয়েছেন, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আমান উল্লাহ এ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারিদের কাছ থেকে বিভিন্ন দলনেতা—দলনেত্রীর মাধ্যমে এক হাজার টাকা করে নিয়েছেন। এমনকি নিজ হাতেও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। এমনকি কোন সদস্য টাকা না দিলে তাকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। আবার অনেক কেন্দ্রে তালিকায় উল্লেখিত সংখ্যার চেয়ে ২/৩ জন করে সদস্য কম দায়িত্ব পালন করেনি। তালিকায় বাদ পড়াদের অর্থ কৌশলে হাতিয়ে নিবে টিআই আমান উল্লাহ।

বুধবার নির্বাচন চলাকালে সরেজমিন বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কেন্দ্রে তালিকার চেয়ে দায়িত্বরত আনসার ভিডিপি সদস্য কম ছিলো। দায়িত্ব পালনকারি অধিকাংশ সদস্যদের পরিচত্র পত্র ছিলো না। কারো কারো পরিচয় পত্র গলায় ঝুলতে দেখা গেলেও তাতে ছিলো না কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার স্বাক্ষর। এরমধ্যে পূর্ব জুমছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মো. ওসমান নামের এক আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিচয়পত্র গলায় দিয়ে।

এ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণবিহীন একজন আনসার সদস্যকে অস্ত্র হাতে নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এমনকি সাংবাদিকদের কাছে ওই আনসার সদস্য প্রশিক্ষণ না থাকার কথা স্বীকারও করেছেন। একই দৃশ্য দেখা গেলে রশিদনগর ইউনিয়নের আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রে। এ কেন্দ্রে রায়হান নামের এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও প্রশিক্ষণ বিহীন কিশোরকে অস্ত্র হাতে দায়িত্ব পালনে দেখা গেছে। অথচ রামুতে বিগত ইউপি নির্বাচনে অসতর্কতাবশত নিজের গুলিতে এক আনসার সদস্য নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন।

এদিকে নির্বাচন চলাকালে অনেক কেন্দ্রে প্লাটুন কমান্ডারদের কাছে দায়িত্বরতদের তালিকা দেখাতে বললে দেখাতে অনিহা প্রকাশ করেন। আবার অনেকে দেখালেও তাতে দেখা গেছে ঘষামাজা করা।

জানা গেছে, রাজারকুল ইউনিয়নের আনসার ভিডিপি দলনেত্রী রেখা বড়ুয়া দুটি গ্রুপের তালিকা করেছিলেন। টাকা দিতে না পারায় ওই তালিকা থেকে অনেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যদের বাদ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আমান উল্লাহ। ভূক্তভোগী এক সদস্যের সাথে রেখা বড়ুয়ার মুঠোফোনে কথোপকথনের একটি অডিও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ওই অভিওতে রেখা বড়ুয়া বলেছেন, অফিসে টাকা ছাড়া কাজ হয়। যারা টাকা দিয়েছে, তাদের ডিউটি দিয়েছে, যারা দেয়নি তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।

নানা অনিয়মে ক্ষুব্দ আনসার ভিডিপি সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রতিটি নির্বাচনের আগে আনসার ভিডিপি সদস্যদের যোগ্যতা দেখে বাছাই করে তালিকা করা হয়। এবার বাছাইয়ের শুরুতে শুধু টাকা নিয়ে তালিকা করা হয়। এজন্য বাছাইয়ের দিন অনেক আনসার ভিডিপি সদস্য আসেননি। এ কারণে এবার দুদিন যাছাই বাছাই করা হয়। কিন্তু এতে কেবল যারা টাকা দিয়েছে তাদের তালিকায় ঠাঁই হয়েছে। আনসার ভিডিপির কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং যাচাই—বাছাই কমিটির সংশ্লিষ্টরা এসব অনিয়মের সাথে জড়িত। এতবড় অনিয়ম রামুতে ইতিপূর্বে কখনো হয়নি। এ ব্যাপারে আনসার ভিডিপিসহ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার চাইবেন ভুক্তভোগীরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা প্রশিক্ষক (টিআই) আমান উল্লাহ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণ বিহীন বা অযোগ্য কাউকে অস্ত্র না দেয়ার জন্য অস্ত্র বিতরণে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছিলেন। এছাড়া পর্যাপ্ত না থাকায় সব সদস্যদের পরিচয়পত্র দেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম ইসলাম জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনের মতো এক রাষ্ট্রীয় কাজে এমন অনিয়ম দুঃখজনক। এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনিয়মের প্রমান হাতে পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
     12
17181920212223
24252627282930
31      
   1234
567891011
2627282930  
       
293031    
       
       
       
    123
18192021222324
       
   1234
       
 123456
282930    
       
     12
3456789
31      
  12345
6789101112
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
2930     
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
  12345
6789101112
13141516171819
27282930   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
242526272829 
       
  12345
6789101112
20212223242526
2728293031  
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930     
       
Theme Created By ThemesDealer.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!