‘বিশ্ব শিশু দিবস ও বিশ্ব শিশু সপ্তাহ ২০২৪”-এর সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, দেশের প্রায় ৭০% শিশুই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, যা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। শিশু অধিকার নিয়ে আন্দোলনরত আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠন “কচি কন্ঠের আসর” ৫ অক্টোবর ২০২৪ খি: শনিবার ঢাকায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হেমায়েত হোসেন। দীর্ঘ ৪৮ বছরের কার্যক্রম তুলে ধরে কচি কন্ঠের আসর-এর প্রাণপুরুষ বলেন, “ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফল কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশে বৈষম্যের বৃত্তে আটকেপড়া শিশু কিশোরদের মুক্ত করতে হবে। একক প্রয়াসে যা সম্ভব নয় মোটেও।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে হেমায়েত হোসেন বলেন, “অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান ও নোবেলজয়ী ড. ইউনুস তিন শূন্যের পৃথিবী গড়ার প্রবক্তা, যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। এখন আমাদের ভাবতে হবে, সম্মিলিত উদ্যোগে আমরা তিন শূন্যের বাংলাদেশ কীভাবে গড়বো এবং নতুন প্রজন্মকে মহান কর্মযজ্ঞে কীভাবে সম্পৃক্ত করে নিবো।
বিশ্ব শিশু দিবস ২০২৪’ এবং ‘বিশ্ব শিশু সপ্তাহ উপলক্ষ্যে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির বিস্তারিত জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।তাঁরা জানান, শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি এবং পরিবেশ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে এই সংগঠনটি।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহজুড়ে নানা কর্মসূচীর উদ্দেশ্য ও বিবরণ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে তুলে ধরতে এক ব্যতিক্রমধর্মী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এসময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও ক’জন শিশু সাংবাদিকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা আয়োজকদের কাছে নতুন আগামীর বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।
বিশিষ্ট সমাজসেবক ও কচি কন্ঠের আসর-এর প্রতিষ্ঠাতা হেমায়েত হোসেন বলেন, “দেশের সকল শিশুকে বৈষম্যহীনভাবে তাদের অধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশে শিশু একাডেমী বলে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান আছে, যা বিগত স্বৈরাচারী শাসনামলে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে।”
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “শিশু একাডেমীকে জনমুখী ও প্রজন্মবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে।একে গতিশীল প্রতিষ্ঠানের রূপ দিয়ে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিশু কিশোরদের পরিপূর্ণ বিকাশ ও তাদের অধিকার বঞ্চনার বিষয়ে ব্যাপক ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।”
অংশগ্রহনকারী শিশু কিশোর ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল মো. কাইয়ুম খান এবং প্রতিষ্ঠাতা হেমায়েত হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে সমাপনী বক্তব্য রাখেন, সহ সভাপতি একেএম লুৎফুর রহমান।
গত সপ্তাহে সংগঠনটি কি কি কাজ তার বিবৃতি দিতে গিয়ে তিনি বলেন, গত ৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বৈষম্যহীন শিশু অধিকার আদায়ের তাগিদ দিয়ে আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠন ‘কচি কন্ঠের আসর’ অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস, জাতিসংঘের আঞ্চলিক অফিস, ইউনিসেফ ও আমেরিকার দূতাবাসে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করে। স্মারকলিপি প্রদানের আগে সংগঠনটির পক্ষ থেকে সকালে ইউনিসেফ র্যালি ও রোডমার্চ সহকারে শিশু প্রতিনিধি একটি দল তাদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করে। এরপর সকাল ১১ টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শিশুদের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এরপর দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজের পর জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এর আগে ওইদিনই বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহত শিশুদের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। স্মারকলিপি প্রদানকালে দেশের বিভিন্ন বাংলা মিডিয়াম স্কুল, ইংরেজী মিডিয়াম স্কুল, অটিষ্টিক স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্কুলগুলোর হচ্ছে- ইউসেপ-ইসমাইল স্কুল, অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, মাস্তুল স্কুল, কড়াইল স্লাম পথশিশু স্কুল, একাডেমিয়া, মনিপুর স্কুল (আদিবাসী ছাত্র), আল আমীন হিফজুল কোরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং ম্যাপেললিফ স্কুলসহ আরো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য, গত ১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) মুকসুদপুরের সূরুপি সালিনা বকসা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৫ হাজারেরও বেশি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে উন্নত মানের খাদ্য পরিবেশন করা হয়। এতে সহযোগিতা করে ‘কচি কন্ঠের আসর ইউএসএ’ এবং ‘চিলড্রেনস ভয়েস’। এছাড়াও সপ্তাহব্যাপী আনন্দ র্যালি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের মাঝে উন্নতমানের খাদ্য বিতরন সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে সংগঠনটি।