সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::

প্রশাসনের গাড়িচাপায় মাহবুবের মৃত্যু; সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ

মো. মেহেদী হাসান / ৫৯ বার
আপডেট সময় :: শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭:২২ অপরাহ্ন

শেরপুরের তারাগড় কান্দাপাড়া গ্রামের মাহবুব আলমের (২০) জীবন ছিল স্বপ্নে ভরা। মা মাহফুজা খাতুনের কষ্ট লাঘব করার আশায় সে প্রতিজ্ঞা করেছিল তাদের পুরনো টিনের ঘর ভেঙে পাকা ঘর বানাবে। বাড়ির খরচ চালানোর পাশাপাশি ছোট বোন মাবিয়ার পড়াশোনার দায়িত্ব নিতেও অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল মাহবুব। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূর্ণ হলো না।

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট শেরপুর শহরে ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে জেলা প্রশাসনের দ্রুতগামী একটি গাড়ির চাপায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় মাহবুব। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এই অকালমৃত্যুতে নেমে আসে শোকের ছায়া। তার মা মাহফুজা খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। কেন তাকে এভাবে প্রাণ দিতে হলো? আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।

মাহবুব শেরপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারের প্রতি ছিল তার দুর্বলতা। আইটি ল্যাব নামে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষকের কাজ করত সে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রোভার স্কাউটের সঙ্গেও ছিল তার নিবিড় সম্পৃক্ততা। গ্রামের কারো রক্তের প্রয়োজন হলে সে নিজ উদ্যোগে তা জোগাড় করত।

তার বড় ভাই মাসুদ জানান, মাহবুবের স্বপ্ন ছিল আইসিটি উদ্যোক্তা হয়ে বিদেশে রেমিট্যান্স এনে দেশের জন্য কিছু করা। কিন্তু তার সব স্বপ্ন মাটির সঙ্গে মিশে গেল।

মাহবুবের পরিবারে এখন শোক আর অনিশ্চয়তা। তার বাবা মিরাজ আলী মানসিক ভারসাম্যহীন। পরিবারের খরচ চালানো তো দূরের কথা, ছেলের জানাজায়ও অংশ নিতে পারেননি তিনি। ৮ শতক বসতভিটার বাইরে কোনো জমি নেই তাদের। মাহবুবের মৃত্যুর পর পরিবারটি অর্থনৈতিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছে।

শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হযরত আলী জানিয়েছেন, তিনি মাহবুবের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা দেখেছেন। তিনি তাদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মাহবুবের ছোট বোন মাবিয়ার পড়াশোনার ব্যয়ভারও তিনি ব্যক্তিগতভাবে বহন করবেন।

মাহবুবের মা মাহফুজা খাতুন প্রশাসনের কাছে তার ছেলের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করেছেন। তার কথায় ফুটে উঠেছে এক মায়ের হারানোর বেদনা, “আমার প্রাণের টুকরা ছেলেকে এভাবে কেড়ে নেওয়া হলো। তার স্বপ্নগুলোও আর পূরণ হলো না।

মাহবুবের মৃত্যুর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও পরিবারটির আহাজারি থামেনি। তাদের জীবনে ফিরে এসেছে শুধু অন্ধকার আর হতাশা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!