শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
অস্ট্রেলিয়া এখন ঢাকা থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ইস্যু করবে নকলা শহরে একের পর এক দুর্ধর্ষ চুরি; চুর আতঙ্কে কর্মজীবীরা মোটরে হাত দিতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ব্যবসায়ীর মৃত্যু ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামী; অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার নোয়াখালীতে ফেসবুকে মোটরসাইকেল বিক্রি বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণায় গ্রেপ্তার ৬ মেয়ের উপর রাগ করে মা মোবাইল ভেঙ্গে ফেলায় কিশোরীর আত্মহত্যা শ্যামনগরে সাংবাদিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত শেরপুরে পুনর্বাসন ছাড়াই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ; উচ্ছেদ আতঙ্কে ২ ভূমিহীন পরিবার জামালপুরে অপহরণের ৪ মাস পরে কলেজ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার নির্বাচনের দাবিতে ‘শেরপুর চেম্বার অব কমার্স’ এ তালা

শেরপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উজানে উন্নতি ও ভাটি এলাকায় অবনতি, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

মুরাদ শাহ জাবাল  / ৫৫ বার
আপডেট সময় :: সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪, ১০:১৬ অপরাহ্ন

গত ক’দিনের টানা অতি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে শেরপুরের ৩ টি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উজানে উন্নতি হলেও ভাটি এলাকায় নতুন করে শেরপুর সদরে ২টি ও নকলা উপজেলার ৩ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

এতে নতুন করে ৫টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে। নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালীর পানি কমতে শুরু করেছে, উজানের পানি নেমে নিন্মাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চলছে। এখন পযর্ন্ত নিহত ৭, নিখোজ রয়েছে ১ জন। পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার। নিম্নাঞ্চলে বাড়ছে পানি, ত্রাণ সহায়তা অপ্রতুল।

পাহাড়ি ঢলের ভয়াবহ বন্যায় দুই সহোদর ভাইসহ ৭জনের মৃত্যু নিহতরা হলেন- নন্নী ইউনিয়নের অভয়পুর গ্রামের সহোদর দুই ভাই হাতেম আলী ও আলমগীর হোসেন, রাস্তা পাড় হতে গিয়ে নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারুপাড় গ্রামের ইদ্রিস আলী, পানিতে ডুবে বাঘবেড় ইউনিয়নের বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ওমিজা বেগম ও বানের পানিতে ভাঙা রাস্তা পাড় হওয়ার সময় পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের আব্দুল হেকিমের স্ত্রী জহুরা বেগম ও নকলা উপজেলায় আজ এক যুবককে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি রাত থেকে কমতে শুরু করেছে। ফলে উজানে ৮টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও উপজেলার ৪ ইউনিয়ন যোগানিয়া,মরিচপুরান,কলসপাড়,রাজনগরে অবনতি হয়েছে। নালিতাবাড়ী- নকলা উপজেলার দুইলেন সড়ক ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষ হাঁস- মুরগি, গরু ছাগল সরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীর ৬টি স্পিটবোড কাজ করছে। নেয়া হচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে আজ রোববার সকাল ১০টায় ভোগাই নদীর পানি বিপদ সীমানার ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদ সীমানার ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রনোপ কুমার কর্মকার জানান পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে ৬ হাজার পুকুরের ৫০ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। আমন ফসল ও শাক সব্জি আবাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, সেতু বিধ্বস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ।এতে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে শতশত পথচারীদের। স্থানীয়রা বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট ও বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

পানিবন্দি এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটসহ গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন পানিবন্দি এলাকার মানুষ। বহু খামারির মুরগির খামারের ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

শেরপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ জসিম উদ্দিন জানান বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বাহিত রোগবালাই যাতে ছড়িয়ে পরতে না পারে এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য কর্মীরা এলাকায় কাজ করছে। পানিবন্দি এলাকার লোকজনের মাঝে পানি বিশুদ্ধকরন টেবলেটসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

হাজার হাজার একর জমির আমন ফসল ও শাকসবজি ক্ষেত পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। উঠতি আমন ফসলের ক্ষতি সাধিত হওয়ায় হাজারো কৃষক দিশেহারা হয়ে পরেছে। শ্রমজীবি মানুষ কাজে যেতে পারছেন না। অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন।

পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগ জোরাতালি দিয়ে অনিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছেন । এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো পানির নিচে। পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে বন্যা কবলিত এলাকার রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ।

এলজিইডি’র শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিধ্বস্ত রাস্তাঘাটের তালিকা করা হয়নি। পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পর তালিকা প্রণয়ন করা হবে।

শেরপুর জেলা খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির বলেন পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর আমন আবাদ নিমজ্জিত হয়েছে। ৩শ হেক্টর জমির শাক সব্জি ক্ষেতের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তিনি বলেন ক্ষতির পরিমান আরো বেশি হতে পারে। এ বিষয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা মাঠে কাজ করছে পরবর্তীতে তা জানা যাবে।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানি কমতে শুরু করায় পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।

তবে নালিতাবাড়ী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দি এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নিতে সেনাবাহিনী কাজ করছে।

তিনি বলেন গৃহহীন পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে। তিনি বলেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি বেসরকারি ভাবে ও ত্রান বিতরন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার আগমুহূর্ত পর্যন্ত প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ে পানিবন্দি এলাকার লোকজনকে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। তবে দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আসাবাদি তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!