ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের দুই গ্রাম খাগালিয়া ও বালিখোলার মধ্যবর্তী স্থানের ধলেশ্বরী নদীর পাড় ও কিছু কৃষি জমির মাটি ভ্যাকু মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে। আর সে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ঢাকার কয়েকটি ইটভাটায়।
এছাড়া ভ্যাকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটতে সহায়তার জন্য নদীর কিছু অংশ ভরাট করা হচ্ছে। ফলে ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে ওই এলাকার কৃষি জমিসহ বসতভিটা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এভাবে নদীর পাড় ও কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় মাটির উর্বরতা কমবে, ফসল উৎপাদনে উপযোগিতা অনেকাংশেই হ্রাস পাবে। পাশাপাশি আবাদ অযোগ্য হয়ে পড়বে কৃষি জমি এবং নাব্যতা হারাবে নদী।
স্থানীয়দের দাবি, ভলাকুট ইউনিয়নের হালিম সরদার, শফিকুল ও তাঁর অনুসারীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অবৈধ মাটি উত্তোলনের সাথে। হালিম সরদার হলো বিএনপির ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক অপরজন হলো শফিকুল হলো আ.লীগ নেতা।
নাসিরনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমামুন বলেন, জমিতে ফসল ফলানোর জন্য মাটিতে যে পরিমাণ উপাদান থাকা দরকার তা কেবল মাটির উপরিভাগে থাকে। তাই জমির টপ সয়েল কেটে নিলে সে জমি ফসল উৎপাদনের কার্যকারিতা হারায়।
গত শুক্র ও শনিবার উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের খাগালিয়া ও বাঘি গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানের ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায় চারটি বাল্কহেড ও কয়েকটি স্টিলের নৌকা ভিড়ানো। অপরদিকে নদীর পাড়ে দুটি ভেকু মেশিন দিয়ে রাতদিন ২৪ ঘন্টা মাটি কাটছে। আর সেই মাটি যাচ্ছে ঢাকার গাজীপুরের কয়েকটি ইটভাটায়। আরো দুটি ভেকু মেশিন বরিশাল থেকে আসবে বলে জানান মাটি উত্তোলনের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।
মাটি কাটায় নিয়োজিত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি বাল্কহেডে কমপক্ষে ১০০০ থেকে ১২০০ঘনফুট মাটি নিয়ে ঢাকার উদ্যেশ্যে ছাড়া হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি বাল্কহেড ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। তারা এই এলাকায় একমাস কাজ করবে।
স্থানীয় বিএনপি নেতা ছোয়াব খান বলেন, ধলেশ্বরী নদী পাড়ের প্রায় হাফ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আগের সরকারের কিছু প্রভাবশালী লোক নদীর পাড় ও কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করেছে। যার ফলে নদীভাঙ্গনসহ অর্ধশতাধিক কৃষক তার কৃষি জমি হারিয়েছেন। এখন নতুন করে কিছু প্রভাবশালী নদীর পাড়ে নজর দিয়েছে। এতে ওই এলাকার নদীর পাড়ের মাটি কেটে নেওয়ায় আবারো কৃষি জমি নষ্ট হওয়ার উপক্রম তৈরি হয়েছে।
নদীর পাড় থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার অপারেটর হাফিজুর রহমান জানান, আমাদের (সানি) কোম্পানির সাথে কিশোরগঞ্জ জেলার পলাশ ও কামালের সাথে নাসিরনগরের শফিকুলের চুক্তি হয়েছে। আমি বেতভুক্ত কর্মচারী। আমি এর বেশি কিছু জানিনা।
প্রধান অভিযুক্ত হালিম সরদার ও শফিকুলের সাথে কথা বলতে মোবাইল ফোনে কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। পরে তাদের পক্ষে জমসেদ মিয়া তালুকদার বলেন, ‘নাসিরনগর ইউএনও’র সাথে কথা বলেই মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি বিক্রি না করলে এত মাটি কি করুম বলেন। এর বেশি জানতে চাইলে ইউএনও’র সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. জয়শর আলী অভিযোগ করে বলেন, যেখান থেকে মাটি কাটতাছে সেটা হইলো ধলেশ্বরী নদীর একটা বাঁধ। এই জায়গা থেকে ভেকু দিয়া মাটি কাইট্টা ঢাকার ব্রিকফিল্ডে বিক্রি করতেছে। এর কারণে কৃষি জমি নদীতে চলে যাবে।
অপর বাসিন্দা মো. গোলাফ হোসেন বলেন, আমরা চাই নদীর পাড় থেকে মাটি কাটা দ্রুত বন্ধ হোক। আগে আ.লীগের নেতারা মাটি কাটতো, এখন বিএনপির নেতারা নদীর দখল করছে। এই ভাবে দখল চলতে পারে না।
নাসিরনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী বরিউস সারোয়ার বলেন, আমি জানতে পেরেছি জমির উচু অংশ কেটে চাষাবাদের জন্য সমতল করার অনুমতি দিয়েছিলো সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কিন্তু তারা নদীর পাড় ও সংলগ্ন কৃষি জমি থেকে মাটি অবৈধভাবে ইটভাটায় বিক্রি করছে সেটা অন্যায়। ভলাকুট ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তাকে বলেছি মাটি উত্তোলন বন্ধ করতে। পরে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।