বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
সংকট কাটেনি জ্বালানি–ডলারের, বেড়েছে লোডশেডিং বন্যার্তদের সেবায় নিঃস্বার্থ পেশাগত দায়িত্ব ও মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দুই সেনা সদস্যের সাথে সাক্ষাৎ করলেন সেনাবাহিনী প্রধান ভোমরা বন্দর শ্রমিক নেতাদের হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন আশাশুনিতে যুবদল নেতার দখল থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফিরে পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ভালুকায় নয়া কাগজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত ভালুকায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদের বিরুদ্ধে ১০ হাজার কোটি টাকার মানহানি মামলা নোয়াখালীতে তোতা হত্যাকাণ্ড: খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন বেলকুচিতে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের গতিশীলতা আনয়ন শীর্ষক প্রশিক্ষণ দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে : স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা

নারায়ণগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় আগুন দিলো কারা?

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১০ বার
আপডেট সময় :: মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪, ১:২৭ অপরাহ্ন
নারায়ণগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় আগুন দিলো কারা?

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারের কারখানায় লাগা আগুন দীর্ঘ ২১ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাটি জানায়, ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট দীর্ঘ চেষ্টা চালিয়ে সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির অবস্থা বেশ বিপজ্জনক হওয়ায় রাতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। ভবনটির ভেতরে ‘শত শত ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন’ বলে দাবি করেছেন তাদের স্বজনরা। তারা স্বজনদের ছবি নিয়ে ভবনের সামনে জড়ো হচ্ছেন। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজতে গিয়ে মিলেছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবনটিতে লুটপাট চালাতে গিয়ে দুই পক্ষের বিবাদে দেওয়া হয়েছে আগুন।

রবিবার (২৫ আগস্ট) রাতে লাগা আগুনের বর্ণনা দিয়ে নাজমুল হাসান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা কারখানার দিকে ছুটে আসি। ৬ তলা ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় প্রথম আগুন দেখেছি। ধীরে ধীরে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কারখানার ভেতরে অগনিত মানুষ দেখেছি, তা প্রায় তিনশতাধিক হবে। তারা সবাই হুড়োহুড়ি করে নামার চেষ্টা করছিল। আর বাঁচাও বাঁচাও বলে সবাই চিৎকার করছিলেন। ধোঁয়ার কারণে যখন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল, তখন সবাই চিৎকার করছিল। অনেকে প্রাণ বাঁচাতে ভবনটির ছাদে চলে গিয়েছিলেন।’

আগুন লাগার প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা পরে ৯ জন লোক রশি বেয়ে নিচে নামতে সক্ষম হয়েছেন উল্লেখ করে নাজমুল বলেন, ‘ক্যামিকেলের কারণে কারখানার ভেতরে আগুনের তীব্রতা বেড়ে গিয়েছিল।’

গত ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও একবার কারখানাটিতে লুটপাট চালানো হয়েছিল বলে জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। সেদিনও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল ভবনটিতে। তবে সেদিন আগুন খুব বেশি ছড়াতে পারেনি। রবিবার ভোরে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার হন গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তার গ্রেফতারের খবরে এদিন কারখানাটিতে আবারও হামলা ও লুটপাট চালানো হয়।

নাজমুল হাসান নামে ওই প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ‘আটকে পড়া এই লোকজনও মালামাল লুটপাট করার জন্যই কারখানার ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন যুবক জানান, রবিবার দিনব্যাপী কারখানাটিতে লুটপাট করা হয়। রাতেও একইভাবে লুটপাট চলছিল। এর মধ্যে রাত ১০টার দিকে এক পক্ষ লুটপাট করে যাওয়ার সময় ভবনে আগুন দেয়। এতে অপরপক্ষ ‘ক্ষতিগ্রস্থ’ হয়েছে। তবে এই লুটপাটকারী পক্ষ দুটি কারা সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তারা।

এদিকে সোমবার বিকালে কারখানাটি পরিদর্শ করেন শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এখানে ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, এখানে মূলত যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি ও লোপাট শুরু করেছিল দুর্বৃত্তরা। তাদের মধ্যে দুটো গ্রুপ তৈরি হয়েছিল। গ্রুপ দুটোর মধ্যে স্বার্থের হানাহানি থেকে এক্সপ্লোশন সৃষ্টি হয়। এই বেশ বিরাট আকারের এক্সপ্লোশন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই কারখানাটি অরক্ষিত ছিল। এই মাসের শুরুতেও এখানে একবার আগুন লেগেছিল। সেখানে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরপর থেকে কারখানাটিতে কোনও গার্ড বা নিরাপত্তা কর্মী ছিল না।’

এদিকে সোমবার নিখোঁজ স্বজনদের তথ্য ও ছবি নিয়ে অনেক লোকজন কারখানার সামনে জড়ো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন সদস্য সেই নিখোঁজদের তালিকা করেছে। তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, নিখোঁজদের কেউই এই কারখানার শ্রমিক নন। স্বজনদের দাবি, তারা তাদের পরিচিতদের সঙ্গে কারখানায় এসেছিলেন। কেউ আবার মালামাল লুটপাট করার দৃশ্য দেখতে এসেছিলেন।

একই কথা বললেন গাজী টায়ার কারখানাটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামও। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট কারখানায় হামলার পর থেকে কারখানাটি বন্ধ ছিল। শুধু নিরাপত্তা প্রহরী ছাড়া কারখানাতে কেউই ছিলেন না। রবিবার লুটপাট চালানোর পর কারখানায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেজাউল করিম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখান থেকে ১৪ জনকে আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। উদ্ধারকৃত এই ব্যক্তিদের কেউই এই কারখানার শ্রমিক বা কর্মচারী নন। তারা সবাই এখানকার মামালাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য এসেছিলেন।

আগুন লাগার কারণ তদন্তের পর বলা সম্ভব হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, রবিবার (২৫ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টায় রূপসীতে অবস্থিত গাজী টায়ার কারখানার একটি ৬ তলা ভবনে আগুন লাগে। কারখানাটিতে টায়ার তৈরির কাঁচামাল, রাবার ও ক্যামিকেলসহ দাহ্য পদার্থ ছিল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!